সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১২:৩৫ অপরাহ্ন

জামায়াত ছাড়া নিয়ে নতুন আলোচনা বিএনপিতে

জামায়াত ছাড়া নিয়ে নতুন আলোচনা বিএনপিতে

স্বদেশ ডে‍স্ক:

জামায়াতে ইসলামীকে ছেড়ে দেওয়া নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে বিএনপিতে। সম্প্রতি গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে দলটির বর্তমান ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য জামায়াতকে ত্যাগ করার মতামত দেন। তবে জামায়াতের সাম্প্রতিক ভূমিকা বিশ্লেষণ করে বৈঠকে এক নেতা বলেন, ঘোষণা দিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিএনপির সঙ্গে আদৌ জামায়াত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ তাদের সব কার্যক্রমই পরোক্ষভাবে সরকারের পক্ষে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির এক সদস্য আমাদের সময়কে বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বহু আগ থেকেই জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য দলের হাইকমান্ডের কাছে মতামত দিয়েছেন। বিশেষ করে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলকে শক্তিশালী করতে ঢাকায় ডেকে স্কাইপের মাধ্যমে সারাদেশের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামত নিয়েছেন।

সেখানে তৃণমূলের নেতারাও জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য তার কাছে জোরালো মতামত দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, জামায়াত কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলছে। কোথাও কোথাও জামায়াতের কারণে বিএনপিকে নানা সংকটেও পড়তে হচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে সম্প্রতি স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়। এ নিয়ে সামনে আরও আলোচনা হবে বলে জানান স্থায়ী কমিটির ওই নেতা।

জামায়াতের সার্বিক ভূমিকা বিশ্লেষণ করে বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, এই দলটি নিজেদের স্বার্থ ছাড়া এক চুলও নড়ে না। বিগত ওয়ান-ইলেভেনে তারেক রহমানকে গ্রেপ্তারের পর বিএনপির পক্ষ থেকে তৎকালীন একজন যুগ্ম মহাসচিব (বর্তমানে স্থায়ী কমিটির সদস্য) জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদের (আদালতের রায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর) সঙ্গে সাক্ষাৎ করে একটি বিবৃতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। জবাবে জামায়াত সেক্রেটারি বলেছিলেন, ‘খালেদা জিয়ার দুর্নীতিবাজ পুত্রের পক্ষে জামায়াত কোনো বিবৃতি দেবে না’। এ ছাড়া ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে ছিলেন না। এ নির্বাচনে যাওয়ার বিরুদ্ধে ছিলেন বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনও। এ নিয়ে দেলোয়ারের সঙ্গে খালেদা জিয়ার দূরত্বও হয়েছিল। কিন্তু জামায়াতের চাপ ও কয়েকজন বুদ্ধিজীবীর পরামর্শে শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়া ওই নির্বাচনে যেতে রাজি হন। তার আগে জামায়াতের সেক্রেটারি মুজাহিদ গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে টেবিলে কাগজ ছুড়ে ফেলে খালেদা জিয়াকে হুমকি দিয়েছিলেন, বিএনপি না গেলেও জামায়াত নির্বাচনে যাবে।

জামায়াত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় আমাদের সময়কে বলেন, এ মুহূর্তে বিএনপির সিদ্ধান্ত হচ্ছে দেশে যে স্বৈরাচার ভোটাধিকার হরণ করে ক্ষমতায় চেপে বসে আছে, তার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করা। ডান-বাম সব বিরোধী গণতান্ত্রিক শক্তিকেই দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজে লাগাতে চায় বিএনপি।

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, ২০-দলীয় জোটের প্রধান শরিক বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নানা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। জোটের অন্য শরিকরাও ধানের শীষের পক্ষে কাজ করছে। কিন্তু জামায়াতের কোনো প্রতিনিধিকে ধানের শীষের পক্ষে বিএনপি পায়নি। বিশেষ করে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনেও ধানের পক্ষে জামায়াতের কোনো নেতাকে বিএনপি পায়নি। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী ২১ ও ২৯ মার্চ জাতীয় সংসদের পাঁচটি উপনির্বাচন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার শুরু হলেও জামায়াতের নেতাকর্মীরা বিএনপির প্রার্থীর পাশে নেই।

বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে অন্তত ভোটের দিন হলেও জামায়াতের নেতাকর্মীদের পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বিএনপির এক স্থায়ী কমিটির সদস্য ও একজন ভাইস চেয়ারম্যান। তাদের কথাও দিয়েছিলেন বলে বিএনপির ওই দুই নেতা জানান। তারা বলেন, জামায়াতের কাছে প্রথমে ধানের পক্ষে পোলিং এজেন্ট চাওয়া হয়েছিল; কিন্তু জামায়াত বলেছে, তারা পোলিং এজেন্ট দেবে না। কিন্তু ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন। কিন্তু ভোটের দিন জামায়াত মাঠে নামেনি।

জামায়াতের উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, সিদ্ধান্ত নিয়েই জামায়াত ভোট-রাজনীতি থেকে বিরত থাকছে। বরং কেন্দ্রীয়ভাবে নেতাকর্মীদের ভোটের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়। জামায়াত নেতারা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন আর কোনো নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করবে না। এ কারণে ঢাকা সিটির নির্বাচনের আগে কেন্দ্র থেকে ঢাকা মহানগরীর নেতাকর্মীদের প্রতি বার্তা ছিল, কেউ যদি ভোটের মাঠে থেকে মামলা-হামলার শিকার হন, দলীয়ভাবে তার দায়িত্ব নেওয়া হবে না। সামনের নির্বাচনগুলোর ব্যাপারেও জামায়াত আগের সিদ্ধান্তেই আছে। ফলে সংসদের আসন্ন পাঁচটি উপনির্বাচন এবং চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনেও ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতকে পাশে পাচ্ছে না বিএনপি।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, ধানের শীষের পক্ষে কাজ না করা অথবা ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার ফল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষেই যাচ্ছে। জামায়াত নেতাকর্মী ও সমর্থক ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গেলে কোনো দিনই নৌকায় তারা ভোট দিত না। এ ভোটগুলো বিএনপির ধানের শীষেই পড়ত।

স্থায়ী কমিটির এক নেতার ভাষ্য, বিএনপি যদি নির্বাচন বর্জন করত, তা হলে ঠিকই জামায়াত নির্বাচনে যেত। খোঁজ নিয়ে দেখেন জামায়াতের রাজনীতিই হচ্ছে ভুলে ভরা। তিনি আরও বলেন, এ মুহূর্তে বিএনপি নির্বাচনে না গিয়ে কী করার আছে। বিকল্প নেই বলেই নির্বাচনে দিকে আছে বিএনপি। টানা প্রায় এক যুগ ধরে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে না পারায় নতুন প্রজন্ম বিএনপি ও ধানের শীষের স্লোগানই ভুলতে বসেছে। নির্বাচনে থাকলে দল আলোচনায় থাকবে, পাশাপাশি জনগণের কাছে গিয়ে সরকারের দুর্নী?তি, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলা যায়। একই সঙ্গে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে যে সরকার প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে, সেটিও জনগণের কাছে সরাসরি তুলে ধরা সম্ভব হয় নির্বাচনে। তা ছাড়া প্রতিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল নতুন উপায়ে ভোট কারচুপি করছে, যা ভেতরে ভেতরে মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তুলছে। একদিন না একদিন মানুষ ঘুরে দাঁড়াবে। জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাজাহান আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেওয়াকেই এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক আন্দোলন বলে মনে করে। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা। আমরা সেই পথেই আছি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877